দেশপ্রেমের দৃপ্ত শপথ নিয়ে ‘প্রতিক্ষণের’ পথচলা

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৪, ২০১৫ সময়ঃ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:০২ অপরাহ্ণ

রাকিব হাসান ও শারমিন আকতার:

protikhon logoবাংলার বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি আর নেই; কিন্তু ছেলেবেলায় দেখা সিরাজউদ্দৌলা সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়ালগগুলো এখনো রয়ে গেছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো বলতে ইচ্ছে করছে “বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। কে তাকে আশা দেবে, কে তাকে ভরসা দেবে। এমন কেউ কি আছে, যে বলবে ‘আশা নয় দূর আশা’।

কোথায় আমরা সান্তনা খুঁজব, কার ওপর আমরা ভরসা করব? দেশ ভাগের সাথে সাথেতো সবকিছুই ভাগ হয়ে গেছে। পক্ষ-বিপক্ষ- নিরপেক্ষ(নির্লিপ্ত)। আমরা চাই ন্যায়পক্ষ। যেখানে শৈবাল আর দিঘিকে শীর উচ্চ করে বলবে না একফোঁটা শিশিরের কথা লিখে রাখতে।চাইনা আর সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু-সাম্প্রদায়িকতা-অসাম্প্রদায়িকতা এসব শব্দ শুনতে।

কারণ আমরা এক মায়ের দুই সন্তান( মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম)। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কথা খুব মনে পড়ছে। তিনি যদি তাঁর বিষের বাঁশী নিয়ে হাজির হতেন; আর সমস্ত অবাধ্য-বেয়ারা বিষাক্ত সাপগুলোকে সুরের যাদুতে মোহগ্রস্থ করে সমস্ত বিষ সমূলে উৎপাটন করতেন। কোথায় গেলেন সেই বীরশ্রেষ্ঠরা ?

যারা পরম মমতায় শত্রুপক্ষের হাত থেকে নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছিল আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মদের(মুক্তিযোদ্ধাদের)। ফিরে আসুন সেই সাহসী সাত বীরেরা। আজ বড় প্রয়োজন আপনাদের। যেই মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিলেন আমাদের জন্য, আজ তাঁরা অন্য কারো ; আমাদের নয় !  আমরাতো কারো নই !

আসুন আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা সবাই মিলে একটি অঙ্গীকার করি, দেশ-মাটি-মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবার। দেশপ্রেম আমাদের অঙ্গীকার। এ নিয়ে logoকাউকে দেবোনা রাজনীতি করতে। জীবন দিয়ে রুখবো ভন্ড দেশপ্রেমিকদের।

অবচেতনভাবে আমরা হৃদয়ে আনুষ্ঠানিকতাকে ধারণ করি । আর স্বাভাবিক অনুভূতি থেকে দূরে সরে যাই। লাশের কফিনে ফুল দিয়ে ক্যামেরার সামনে ছবি তুলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগি। লাশের রাজনীতিতে শামিল হই। অথচ নিহতের পরিবারের খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করি না। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলিনা। যদি কেউ বলার দু:সাহস করে তবে সে অর্ধ সত্য বলছে বলে টিপ্পনি কাটি। এটা আমাদের মজ্জাগত না হলে ও অভ্যাসগত। আমাদের রাজনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন কতটুকু দেশের জন্য, আর কতটুকু নিজের জন্য রাজনীতি করেন। দেশকে নিয়ে অনেক বুলি আমরা আওড়াই কিন্তু দেশকে আদৌ কি ভালোবাসি?

আমরা নিজ দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যঙ্গ করি অথচ ভারতীয় চলচ্চিত্রে আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পাশ্ববর্তী দেশে আমাদের কোন চ্যানেল চালানোর অনুমতি নেই। অথচ তাদের চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল আমরা দিনরাত দেখি। আর মুখে দেশপ্রেমের বড় বড় কথা বলি। এই কি দেশপ্রেমের লক্ষণ ?

গুজব-গুঞ্জন আর বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে কার আগে কে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে শেয়ার করব তা নিয়ে রীতিমত হুমড়ি খেয়ে পড়ি। কিন্তু একজন খুদে লেখক সারিনাকে নিয়ে আমরা তেমন একটা আত্মহারা হই না। দেশের আনাচে কানাচে যত নেতিবাচক সংবাদ আছে তার পেছনে আমরা ছুটি। গণমাধ্যমের কর্মীরাও আমাদের ছোটায়। অথচ ইতিবাচক সংবাদকে আমরা অবলিলায় অবজ্ঞা করি।

logo boysakজাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশের নারী আমিরা হককে আমরা কজনইবা চিনি। যতটা চিনি কুখ্যাত বাংলা ভাইকে। গণমাধ্যমই আমাদের চিনিয়েছে। কিন্তু এটাই কি হওয়ার কথা ছিল? সকল গণমাধ্যমে একই ঘটনার একই ধরণের ছবি-শিরোণাম ও সংবাদ বিশ্লেষণ হয়।

ঘটনার পেছনের ঘটনা নিয়ে খুব একটা অনুসন্ধানী রিপোর্ট কি আমরা দেখতে পাই? বিনোদন মানেই বিদেশি নায়িকার অশ্লীল অপ্রাসঙ্গিক ছবি, অতিব্যক্তিগত খবর নিয়ে মাতামাতি। অথচ দেশীয় শিল্পীদের ভালো কাজগুলো আমরা কজনইবা তুলে ধরি?

আমরা যদি দেশকে ভালবাসি, দেশপ্রেম নামক শব্দটিকে হৃদয়ে লালন করি তাহলে উপরের জিজ্ঞাসাগুলোর জবাব আমাদের কাছে আছে। এরকম আরও অনেক প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে কয়েকজন স্বপ্নচারী মানুষকে সাথে নিয়ে ’প্রতিক্ষণের’ পথচলা শুরু আজকের শুভ দিনে। আসুন শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর জন্য নয় ; অন্তরের অন্তস্থল থেকে অঙ্গিকারবদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলি। চেতনে -অবচেতনে দেশকে ভালেবেসে দেশমাতৃকার ছবি হৃদয়ে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলি ‘প্রতিক্ষণ’ ।

 

রাকিব হাসান ও শারমিন আকতার
সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক
প্রতিক্ষণ ডট কম

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G